খুবিতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন
স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস জানলে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে : উপাচার্য
আজ ২৬ মার্চ (মঙ্গলবার) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস এবং ইতিহাসের জন্য যাদের ত্যাগ অনস্বীকার্য- তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। নতুন প্রজন্ম দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগের ইতিহাস সঠিকভাবে জানলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি দূর করতে হবে। ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ ও জাতির জন্য নিজেদের কাজের মাধ্যমে দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাঙালির স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত গিয়েছিল, তা ১৯৭১ সালে পুনরায় অর্জিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত রূপ ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু এর পূর্বে ১৭৫৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা ইতিহাসে জানা যায়। তিতুমীরের বাশের কেল্লা থেকে শুরু করে সিপাহী বিদ্রোহ এবং যুগে যুগে সময়ের সাথে শতকে শতকে এই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার আন্দোলন চলেছে। ২১৪ বছরে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের সেই মহান নেতা বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের জন্য জীবনের একটি বড় সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।
উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয় ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমরা স্বাধীনতা ঠিকই পেয়েছি কিন্তু চূড়ান্ত মুক্তি বলতে যা বুঝি- ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা তা কিন্তু এখনও আমরা করতে পারিনি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার যাত্রা শুরু করেছিলেন- কিন্তু স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ফলে আমরা সেই চূড়ান্ত মুক্তির স্বাদ পাইনি। তখন থেকেই দেশ আবারও পিছিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন আমরা সেই মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪টি স্তম্ভের মধ্যে একটি ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা স্বাধীনতাকাল থেকে এখনও অত্যন্ত চতুরতার সাথে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারাও এই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তারা বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আজকের এই বাংলাদেশের উন্নতি সহ্য করতে পারছে না। আজ দেশ যদি পাকিস্তানের অংশ থাকতো তাহলে বাংলাদেশ এই অবস্থানে থাকতো না। বাংলাদেশ আজ সবক্ষেত্রেই পাকিস্তান থেকে যোজন যোজন এগিয়ে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি পাকিস্তান ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি। ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজও আমরা পাইনি। কেন আমরা এই স্বীকৃতি পাইনি, কারা এর নেপথ্যে রয়েছে তা ভেবে দেখা দরকার।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. কামরুল হাসান তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুবেল আনছার। আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. তরুণ কান্তি বোস, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আলম হাওলাদার এবং প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী শাফিন ইমতিয়াজ শিহাব। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ফারজানা জামান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে শিক্ষার্থীদের সংগঠন চেতনা’৭১ আয়োজিত অনলাইন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পুরস্কার বিতরণ করেন।
এর আগে সকাল ৬টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে শোভাযাত্রা সহকারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অদম্য বাংলায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, ডিসিপ্লিনসমূহ, আবাসিক হলসমূহ, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্ট, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- অদম্য বাংলার সম্মুখে দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল।