খুবিতে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার গৌরবময় ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে : উপাচার্য

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকাল ৯টায় আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন, ভাষা ও জাতি পরস্পর সম্পর্কিত। ভাষার সাথে সংস্কৃতি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিশ্বের প্রায় ২৮-৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। বিশ্বায়নের এই যুগে ভাষা নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বাংলা ভাষা রক্ষায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার গৌরবময় ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে জাগ্রত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভাষা একটা জাতির সংস্কৃতির প্রতিফলক। পৃথিবীতে বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য রক্ত ঝরিয়েছিলেন। বাঙালির সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে। ভাষা শহিদদের এ আত্মত্যাগের কথা ছড়িয়ে গেছে সারাবিশ্বে।
উপাচার্য বলেন, ভাষা আন্দোলনের সুদীর্ঘ ইতিহাস বাঙালি জাতির বিভিন্ন বঞ্চনা-গঞ্জনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ। যার ধারবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র। দ্বি-জাতি তত্ত্ব থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক জায়গা পেরিয়ে আজকে আমরা একটা মর্যাদার জায়গায় অবস্থান করছি। আমাদের সবসময় ইতিহাস জানতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের সারথী হতে হবে।
উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহান ভাষা শহিদ, বঙ্গবন্ধুসহ দেশের মুক্তিসংগ্রামের শহিদ, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহিদ, জাতীয় চার নেতাসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নূর আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন  কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুবেল আনছার, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. তরুণ কান্তি বোস, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সভাপতি দীপক চন্দ্র মন্ডল ও সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী গৌরব কুমার পাল। সভা সঞ্চালনা করেন ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক বায়েজীদ খান। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল ৬.৩০ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে কালো ব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলনের পর উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রভাতফেরি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সেখানে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর পরপরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, ডিসিপ্লিনসমূহ, আবাসিক হলসমূহ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন, এ্যালামনাই এসোসিয়েশন এবং আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি নেভাল ও আর্মি উইংয়ের ক্যাডেটরা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান পালনে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর শহিদ মিনারের পাশে ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন কর্তৃক প্রকাশিত দেয়ালিকার উদ্বোধন করেন উপাচার্য।
এছাড়া বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন মসজিদে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বালন ও বিকাল ৪টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।